সন্দীপন চক্রবর্ত্তী, উলুবেড়িয়া : লড়াই করে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৩৫, প্রথম দশের মেধা তালিকায় স্থান না হলেও পুপুর লড়াই বাংলা জুড়ে নজির বিহীন। নিজের ছোটো ছোটো হাতে সংসার সামাল দিয়েই উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল পুপুর। উচ্চ শিক্ষায় ইংরেজি বিষয় নিয়ে পড়ে দু-চোখে শিক্ষিকা হবার স্বপ্ন দেখছে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পুপু। তার নিত্যদিনের সঙ্গী অভাব, অনটন, আর্থিক সমস্যা। তবে এই সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে বাবা - মা'র সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে লেখা পড়ার পাশাপাশি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের একাধিক দ্বায়িত্ব। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সংসারে হাজার কর্মব্যস্ততা মধ্যে থেকেও উচ্চমাধ্যমিকে ৪৩৫ নাম্বার পেয়ে চমকে দিয়েছে করাতবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী, উলুবেড়িয়া করাতবেড়িয়া কাজিরচড়া গ্রামের মেয়ে পুপু কাঁড়ার।
প্রতিদিন ভোর পাঁচ টায় উঠে ২৯ টি ছাগল দেখাশোনা ও তাদের খাবার দেওয়া। আর এই পর্ব শেষ হলেই ৩ টি গরুকে খাবার দেওয়া। এরপর সকালে সংসারের মা বাবার কাজে সাহায্য করে টিউশন। আর যেদিন টিউশন না থাকে সকালের কাজ সেরে রান্নার কাজে লেগে পড়া। রান্না ও সব কাজের শেষে একটু বিশ্রাম। পাশাপাশি পান বরোজে আগাছা পরিষ্কার জল দেওয়া। সংসারের কাজ রান্না-বান্না, ছাগল গরু সামাল দিয়ে সারা দিন পড়ার মত সময়ই পায় না পুপু, পড়ার জন্য সময় ছিল সন্ধায় পর। দুপুরে কোনও দিন সময় পেলে বইয়ের পাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া। আবার বিকেলে গরু-ছাগল গোয়ালে তুলে, তাদের খেতে দিয়ে সংসারের কাজ সামলে পড়তে বসা। এই ছিল পুপু'র প্রতিদিনের রুটিন। এপ্রসঙ্গে মা মধুশ্রী কাঁড়ার জানান, একদিকে সংসারের অভাব অনটন আর অন্যদিকে আমি ও ওর বাবা সারাদিন ব্যস্ত মাঠে এবং পান বরোজ, ছাগল গরুর খাবার যোগাড় করতে। বেশির ভাগ সময়টা সংসার সামাল দিয়েছে মেয়ে। এমনকি পরীক্ষার দিনেও নিজেই রান্না করে খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেছে। এই অভাবের সংসারে আমরা যতটা পেরেছি মেয়েকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ওর স্বপ্ন আরও লেখাপড়া করে শিক্ষিকা হবে। চাকরি পেয়ে বাবার কষ্ট কমাবে।
এপ্রসঙ্গে গৃহ-শিক্ষক তরুণ ধাড়া জানান, সংসারের অভাব অনটন কখনো তাকে হার মানাতে পারেনি। চেষ্টা করেছি, লেখাপড়ার সামগ্রী দিয়ে যতটা সম্ভব সাহায্য করার। আগামী দিনেও ওর পাশে আছি আমরা ।
0 Comments